সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুন) বিকেল ৩টার দিকে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে নাসির উদ্দিনের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের অন্য জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ডিবি-গুলশানের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘নাসির এ মামলার প্রধান আসামি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও চারজনকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই চারজনের এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
এর আগে দুপুরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদসহ ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাসিরের বাসায় প্রবেশ করে। এসময় নাসির তার বেডরুমে খাটের ওপর বসা ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করেছে ডিবি। তবে সেগুলো অনুমোদিত কিনা তা যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।
অভিযানের বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, গুলশান বিভাগে একটি টিম অভিযানে এসেছে। আমরা জানি, পরীমণি একটি হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছেন। মামলার সব আসামিকে গ্রেফতার করা হবে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নাসিরের বাসায় আসছি, অভিযান চালাচ্ছি।
নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায়ে আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।
নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।
সোমবার (১৪ জুন) সকালে সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমণি। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
জানা যায়, ৯ জুন (বুধবারে) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন এই অভিনেত্রী। পরে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সামনে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।’
দামি মদ নিতে না দেওয়ায় আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে : গ্রেফতারের আগে নাসির
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণির মামলা দায়েরের পর এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আজ সোমবার (১৪ জুন) তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে নাসির উদ্দিন দাবি করেন, দামি মদ নিতে না দেওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার রাতে বোট ক্লাবে মদ্যপ অবস্থায় ঢুকে পরীমণিসহ কয়েকজন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকা এক ছেলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আর তারা যখন রাতে ক্লাবে প্রবেশ করে তখন সিকিউরিটি অফিসাররাও ছিলেন না। নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ঘটনার রাতে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি বোট ক্লাবের একজন পরিচালক। আমি যখন রাতে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, তখন পরীমণিসহ কয়েকজনকে ক্লাবের ভেতরে ঢুকতে দেখি। যারা এসেছিল সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিল।
‘আমি কমপ্লিটলি ভিকটিমাইজড’ উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ক্লাবের ভেতরে ঢুকেই বারের রিসিপশনে চলে যায় তারা। সেখানে দামি মদ ছিল। সেসব দামি দামি মদ তারা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আপনার বিরুদ্ধেই কেন অভিযোগ পরীমণির-এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, তারা ড্রিঙ্কস নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আর তারা তা নিয়ে যেতে পারেনি। আমার ধারণা, এই ক্ষোভ থেকেই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।